04/09/2023
ফাইনাল ইয়ারে থাকতে ২০২০ এর অক্টোবরে ইউএসএমএলই স্টেপ ওয়ান দেবার পর একটা ডিটেইলড পোস্ট দিছিলাম টাইমলাইনে আর প্ল্যাটফর্মে। এত হাজার হাজার মানুষের রেন্সপন্স দেখে দুইদিন পর অবশ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে পোস্ট টা ডিলিট দিছিলাম আর আমার টাইমলাইনে অনলি মি, কারণ এই এটেনশন জিনিস টা আমার একদম ই সহ্য হয় না, সাফোকেটেড লাগে। উদ্দেশ্য ছিল শুধু জুনিয়র দের মোটিভেট করা, সেটা ভাল মত করতে পেরেছি বলেই মনে হয়, আমার পরে অনেক জুনিয়র ফাইনাল ইয়ারে স্টেপ ওয়ান দেবার সাহস করেছে। কিন্তু আর একটা উদ্দেশ্য আমার ইনটেনশনাল ছিল না, সেটা হচ্ছে গত আড়াই বছরে যে কত শত বার ভেংগে পড়েছি আর আমার নিজের পোস্ট টা পড়ে মোটিভেটেড হয়েছি আমি জানি না। আজকের পোস্ট টা লেখার উদ্দেশ্য আগের মতোই, কিন্তু এবার দুটো উদ্দেশ্যেই ইনটেনশনাল। নিজেই হয়ত পড়ব কয়েকশ বার।
ইমার্জেন্সি মেডিসিনে রেসিডেন্সি করব এই স্বপ্ন দেখেছি থার্ড ইয়ার থেকে, কিন্তু আমেরিকাতে ইমার্জেন্সি মেডিসিনে নন ইউ আই এম জি নেয় না, ভিসা রিকোয়ারিং দের জন্য আরো টাফ, আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। বাংলাদেশ থেকে ওয়ান অফ দ্য ইয়াংগেস্ট পারসন হিসেবে রেসিডেন্সি শুরু করব ইনশাআল্লাহ, ইমার্জেন্সি মেডিসিনে বোধ হয় আমিই বাংলাদেশ থেকে প্রথম। আমার আম্মু বিশ্বাস করে আমি অনেক কিছুর পাইওনিয়ার হবো। এই জার্নি তে এমন কিছু মানুষ পেয়েছি যাদের প্রতি আমি ফরএভার গ্রেইটফুল, কিছু কারণে এখানে মেনশন দিচ্ছিনা।
২০১৬ সালে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় থেকেই স্বপ্ন ছিল আমেরিকায় রেসিডেন্সি করব। এর বড় স্বপ্ন আমি কিভাবে দেখতে শিখেছিলাম আমি নিজেই জানি না, কারণ আমার আমেরিকার গ্রীন কার্ড তো দূরে থাক, আমেরিকার পঞ্চাশটা স্টেটে থার্ড অর্ডার রিলেটিভ ও নাই, তবে আমার কলেজ রাইফেলসের একটা ভাইটাল রোল ছিল বলে ফিল করি। মনে আছে ফাইনাল প্রফের সময়টাতে প্রায় ৫০০ ইমেইল করেছিলাম একশোর বেশি হস্পিটালে রোটেশন করার জন্য, ওই প্যান্ডেমিকের সময় টা খুব ই টাফ ছিল পারসিস্টেন্ট থাকা। ফাইনাল প্রফের রেজাল্টের পর যখন সবাই ইন্টার্নিশিপে জয়েন করার জন্য এক্সাইটেড আমি নতুন একটা দেশে সারভাইভ করতেছি প্রতিটা দিন। ২০২১ এ তিন মাস আমেরিকায় রোটেশন করেছি। এই সময় টা ছিল আমার লাইফে সব চাইতে টাফ টাইমের একটা।
আমি যে কয়জন রেসিডেন্ট কে চিনতাম তাদের সবার একটা স্ট্রং সাপোর্ট সিস্টেম ছিল। আমিই বোধহয় এমন একজন যে যার গ্রীন কার্ড নাই, আমেরিকায় ফ্যামিলি নাই, রিলেটিভ নাই, বাবা মা ডাক্তার না/ ফ্যামিলি তে ডাক্তার নাই এবং কোনো ফাইনানশিয়াল সাপোর্ট নাই তবুও এত বড স্বপ্ন দেখেছি। যাদের অন্তত একটা সাপোর্ট আছে তারা যে কতটা ব্লেসড এটা বুঝলে অনেক কিছু ইজি হয়ে যায়।
৩০ ঘন্টা প্লেন জার্নি করে এমন এক দেশে গেলাম যেখানে কেউ আমার না, অনলাইনে খোজা বাসায় কিভাবে যাব জানি না, গিয়ে কি খাবো সেটাও জানি না, এগুলা এখন মনে করলে ভয় লাগে। প্রচন্ড একা লাগত, কত বার যে বাসে/ মেট্রোতে হারিয়ে গেছি হিসাব নাই, আমেরিকা ক্যাশলেস কান্ট্রি, এস এস এন ছাড়া ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেছি একাউন্ট খোলার জন্যে, এভ্রি স্টেপে স্ট্রাগল করেছি কিন্তু কল দেবার মানুষ পায় নি। প্রতি দিনের স্ট্রাগল লিখলে বই লেখা হয়ে যাবে। তিন মাস পর দেশে এসে স্টেপ টু পড়া শুরু করলাম, টানা টেবিলে থাকতে থাকতে অনেক ওয়েট গেইন করেছি। আজকে পড়াশোনার কথা লিখব না, এগুলা সবাই লিখে, যা লিখে না সেটা লিখব। চারপাশে এত টক্সিক পজিটিভ মোটিভেশন দেখে আমার হাসি পায় এই ভেবে যে, আপনি সবাইকে নিজের মত প্রিভিলেজড মনে করেন কেন?
গত বছরের জুনে স্টেপ টু দিয়ে আবার গেলাম রোটেশন করতে। শিকাগো গিয়ে OET দিয়েছি, প্রতিমাসে এক স্টেট থেকে আরেক স্টেট, এক শহর থেকে আরেক শহর ছুটেছি। শিকাগো, ইন্দিয়ানা, নিউইয়র্ক, ডেলাওয়ার, সিয়াটল সব মিলিয়ে আট টা হস্পিটাল ক্যাম্পাসে রোটেশন করেছি। একোমোডেশন ম্যানেজ করা অনেক হেকটিক ছিল, হোটেল, এয়ার বি এন্ড বি এক্সপেনসিভ হওয়ায় লিভিং রুম শেয়ার করেছি, ঈদের দিন শুধু ম্যাকডোনাল্ডের একটা চিকেন বার্গার খেয়ে কাটিয়েছি, আড়াই ডলার সেইভ করার জন্য মাইলের পর মাইল হেটেছি, এত সব লেখার উদ্দেশ্য এটাই যে আমেরিকান রেসিডেন্সি মানে শুধু ইউএসএমএলই এক্সাম গুলা না, আরো অনেক কিছু।
টানা নন স্টপ একটার পর একটা গোল এচিভ করতে গিয়ে মেন্টালি এক্সহস্টেড ফিল করেছি সম সময়। এপ্লিকেশন সিজনে স্টেপ ৩ দিতে গিয়ে দুই বার টিকেট চেঞ্জ করে দেশে আসতে নিছিলাম, এতটাই মেন্টালি ফ্যাটিগড ছিলাম।
আমার টোটাল প্রায় ৪০ লাখ টাকা স্পেন্ড করতে হয়েছে এখন পর্যন্ত। অনেকে দেখি নিজেদের স্বার্থে এই একাউন্ট টাকে মডিফাই করে দশ লাখে নিয়ে আসেন যেটা একদম ই উচিত না। আমি ফাইনাল ইয়ার থেকে শত শত স্টুডেন্ট পড়িয়েছি যেটার কারণে মেন্টাল পিস বলতে কিছু ছিল না, বাট আই হ্যাড নো আদার অপশন, এরপরেও ফিফটি পার্সেন্টের বেশি টাকা আমি লোন নিছি ফ্যামিলি মেম্বার এন্ড ফ্রেন্ডসদের থেকে। ম্যাচ না হলে হয়ত সেকেন্ড টাইম এপ্লাই করতে পারতাম না, আমেরিকান ডলার আর্ন করলে পারসিস্টেন্ট থাকার মোটিভেশন দেওয়া ইজি, কিন্তু সবাই প্রিভিলেজড না আগেই বলেছি।
আমেরিকান রেসিডেন্সি এখন সুপার কম্পিটিটেটিভ, বিশেষ করে যদি আপনার গ্রীন কার্ড না থাকে। প্রতি বছর আমেরিকান গ্র্যাজুয়েট বাড়ছে, ক্যারিবিয়ান গ্র্যাজুয়েট বাড়ছে, ভিসা রিকোয়ারিং ক্যান্ডিডেটদের জন্য আরো কঠিন হচ্ছে। নন ইউ আইএমজি দের জন্য ডাটা অনুযায়ী ম্যাচ রেট ৫৯%, কিন্তু এটা আসলে আরো অনেক কম। কারণ হাজার হাজার এপ্লিকেন্ট কোনো ইন্টারভিউ ই পায় না, এরপর এই পারসেন্টেজের ভিতর গ্রীন কার্ড হোল্ডার রা ইনক্লুডেড।।সাপোজ, যদি ১০ হাজার নন ইউ আই এম জি এপ্লাই করে, ৩০% ক্যান্ডিডেট ইন্টারভিউ পায় না, তাহলে থাকে ৭ হাজার এর ভিতর ম্যাচ করবে ৪ হাজার, পার্সেন্টেজ ধরা হয় এই ৭ হাজারের ভিতরে। তাহলে সব মিলিয়ে ম্যাচ রেট ৪০-৪৫%। ভিসা রিকোয়ারিং ক্যান্ডিডেট দের ম্যাচ রেট এরাউন্ড ৪০% হবে হাইয়েস্ট, এর কম ও হতে পারে। এন আর আম পি যে ডাটা রিলিজ করে সেটা হচ্ছে এপ্লাইড ক্যান্ডিডেট দের ভিতর শুধু যারা ইন্টারভিউ পায় তাদেরকে নিয়ে , এবার বাংলাদেশ থেকে যে ৭-৮ জন ভিসা রিকোয়ারিং ম্যাচ করেছেন, তাদের সবার প্রোফাইল ই স্টেলার। কেউ কারো থেকে কম না। আমি যাদের চিনি সবার সিকে স্কোর ২৫৫+।
এবোভ অল, রেসিডেন্সি তে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট ফ্যাক্টর হচ্ছে কানেকশন, যেটার জন্য মেডিকেল কলেজ এলামনাই নেটওয়ার্ক। এই কানেকশন কে আমি আন্ডারএস্টিমেট করেছি, আই থট আমার সিভি উইল স্পিক ফর মাইসেল্ফ। বাট দিস ইজ নট হাউ দিস দুনিয়া ওয়ার্কস। রেসিডেন্সি প্রসেস ইস আনফেয়ার।
অনেক অনেক কিছু স্কিপ করে গেছি, সবকিছু লিখতে গেলে ত্রিশ টা পোস্ট দিতে হবে, কিছু মানুষ কমেন্ট করবে স্ট্রাগল বেচতেছি, অনেকেই পারসোনালি নিবে, সো তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আমি আমার অবজারভেশন লিখেছি, পছন্দ না হলে কাইন্ডলি স্কিপ করবেন। টক্সিক মোটিভেশন দেওয়া আমার দায়িত্ব না, আমি চাই রিয়েলিটি টা জেনে সবাই প্লান করে মুভ করুক। আর যাদের ফ্যামিলি / ফাইনানশিয়াল সাপোর্ট আছে তাদের কাছে আমার পোস্ট ডিমোটিভেটিং মনে হতে পারে, আমি তাদের জন্যে লিখিনি, আমি লিখেছি আমার মত মানুষদের জন্যে।
ইউএসএমএলই নিয়ে আর কোনো পোস্ট দিব না। এত বছর পর ফাইনালি একটু রিলাক্সড, সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চাই, অনেক ওয়েবিনার করেছি যাদের হেল্প লাগবে ইউটিউব থেকে দেখে নিলেই হবে, Nahid Hasan,MD. পেইজ থেকে কিছু করতে পারি, যদিও সিউর না। আমার শেষ ব্যাচ টা আগামী পরশু শুরু করব, এরপর আর লাইভ ক্লাস নিব না