29/09/2025
সাদা স্রাব / লিউকোরিয়া কেন হয়?
হলে করণীয় কি? Talk To Health Arpi's Home Arpita Das Sid
সাদা স্রাব, যা লিউকোরিয়া (Leukorrhea) নামে পরিচিত, এটি মহিলাদের একটি স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক শারীরিক অবস্থা হতে পারে। এটি কেন হয় এবং এর প্রতিকারে আপনার কী করা উচিত, নিচে তা আলোচনা করা হলো।
সাদা স্রাব/লিউকোরিয়া কেন হয়?
সাদা স্রাব হওয়ার দুটি প্রধান কারণ রয়েছে—স্বাভাবিক (শারীরবৃত্তীয়) এবং অস্বাভাবিক (সংক্রমণজনিত)।
১. স্বাভাবিক (শারীরবৃত্তীয়) কারণ
এই স্রাবটি হলো যোনিপথের সুস্থতার একটি লক্ষণ। এটি যোনিপথকে আর্দ্র রাখে, পরিষ্কার করে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এটি সাধারণত স্বচ্ছ বা হালকা সাদা রঙের হয়, পাতলা হয় এবং এতে কোনো দুর্গন্ধ থাকে না।
* হরমোনের পরিবর্তন: মাসিকের বিভিন্ন পর্যায়ে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রার ওঠানামার কারণে স্রাবের পরিমাণ বাড়ে। যেমন, ডিম্বাণু নিঃসরণের (Ovulation) সময় স্রাব বেড়ে যায়।
* গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রা বাড়লে স্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তে পারে।
* যৌন উত্তেজনা: যৌন উত্তেজনার সময় যোনিপথ আর্দ্র রাখার জন্য স্রাব নিঃসৃত হয়।
* জন্মনিয়ন্ত্রক পিল সেবন: কিছু হরমোনাল জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি ব্যবহার করলে স্রাব বাড়তে পারে।
২. অস্বাভাবিক (সংক্রমণজনিত) কারণ
যদি স্রাবের রঙ, গন্ধ বা গঠনে পরিবর্তন আসে, তবে এটি সাধারণত কোনো সংক্রমণ বা সমস্যার কারণে হয়। একেই অতিরিক্ত সাদা স্রাব বা অস্বাভাবিক লিউকোরিয়া বলা হয়।
| সংক্রমণের ধরন | স্রাবের বৈশিষ্ট্য | অতিরিক্ত লক্ষণ |
|---|---|---|
| ইস্ট ইনফেকশন (ছত্রাক/ফাঙ্গাস) | ঘন, সাদা এবং জমাট বাঁধা, দুধের ছানার মতো। | যোনিপথে তীব্র চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া। |
| ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস (BV) | পাতলা, ধূসর বা সাদা রঙের। | মাছের মতো তীব্র দুর্গন্ধ (সহবাসের পর দুর্গন্ধ বাড়ে)। |
| ট্রাইকোমোনিয়াসিস (যৌনবাহিত) | হলুদ বা সবুজাভ, ফেনাযুক্ত স্রাব। | দুর্গন্ধ, প্রস্রাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া। |
| অন্যান্য কারণ | | দুর্বল স্বাস্থ্য, অপুষ্টি, ডায়াবেটিস, দীর্ঘকাল অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ বা পরিচ্ছন্নতার অভাব। |
সাদা স্রাব হলে করণীয় কি?
স্বাভাবিক স্রাবের জন্য বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই, তবে অস্বাভাবিক স্রাব দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
১. যখন চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি
যদি আপনার স্রাব অস্বাভাবিক হয় এবং নিচের কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে দেরি না করে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন:
* স্রাবের রঙ, গন্ধ বা গঠনে পরিবর্তন।
* স্রাবের সাথে তীব্র চুলকানি, জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব করা।
* তলপেটে ব্যথা বা জ্বর থাকা।
* যৌন মিলনের সময় ব্যথা বা রক্তপাত হওয়া।
চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণটি নির্ণয় করে সংক্রমণ অনুযায়ী চিকিৎসা (যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ঔষধ) দেবেন। নিজের ইচ্ছামত দোকান থেকে ঔষধ কিনে খাওয়া উচিত নয়।
২. জীবনযাত্রা ও স্বাস্থ্যবিধি পরিবর্তন
সংক্রমণ এড়াতে এবং যোনিপথের সুস্থতা বজায় রাখতে এই বিষয়গুলো মেনে চলুন:
* পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: যোনিপথ সব সময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন। মৃদু সাবান ও হালকা গরম জল ব্যবহার করুন।
* সঠিকভাবে পরিষ্কার করা: টয়লেট ব্যবহারের পর সব সময় সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে (যোনিপথ থেকে মলদ্বারের দিকে) পরিষ্কার করুন, যাতে মলদ্বার থেকে জীবাণু যোনিপথে প্রবেশ না করে।
* অন্তর্বাস: সুতির (Cotton) অন্তর্বাস পরিধান করুন, কারণ এটি আর্দ্রতা শুষে নেয় এবং যোনিপথকে শুষ্ক রাখতে সাহায্য করে।
* ডুচিং এড়িয়ে চলুন: যোনিপথের ভেতরের অংশ জল বা অন্যকিছু দিয়ে ধোয়ার (Douching) প্রয়োজন নেই। এতে প্রাকৃতিক উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হয়।
* সুষম খাদ্য: পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার, যেমন - টক দই, শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম: সঠিক ঘুম এবং বিশ্রাম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
গুরুত্বপূর্ণ কথা:
যদি স্রাব হলুদ, সবুজ বা ধূসর হয়, দুর্গন্ধ থাকে, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হয়, বা স্রাব ঘন ও জমাট বাঁধা প্রকৃতির হয়, তবে নিজে নিজে চিকিৎসা না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ, সঠিক রোগ নির্ণয় না হলে ভুল চিকিৎসায় সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।