02/03/2022
#ইমপ্ল্যান্ট
ইমপ্ল্যান্ট কি
ইমপ্ল্যান্ট শুধুমাত্র প্রজেস্টোরেন হরমোন সমৃদ্ধ অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, যা মহিলাদের বাহুতে চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয় । ৩-৫ বছর মেয়াদি এই পদ্ধতির কার্যকারিতার সময় নির্ভর করে এর রডের সংখ্যা এবং হরমোনের ধরনের উপর । ইমপ্ল্যান্ট প্লাস্টিক বা সিলিকন রাবারের তৈরি এক বা একাধিক ক্যাপসুল বিশিষ্ট ডিভাইস, যার ভিতরে কৃত্রিম প্রজেস্টোরেন হরমোন থাকে । চামড়ার নিচে স্থাপনের পরপর ক্যাপসুলের গায়ের অসংখ্য অনুবীক্ষণিক ছিদ্র দিয়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে ।
#বিভিন্ন প্রকার ইমপ্ল্যান্ট
1.ইমপ্ল্যানন-এটি এক রড বিশিষ্ট ৩ বছর মেয়াদি ইমপ্ল্যান্ট । ইমপ্ল্যাননে ৬৮ মিলিগ্রাম ইটোনজেস্ট্রিল ইথিনিল-ভিনাইল এ্যাসিটেট এর একটি পলিমার ক্যাপসুলের ভিতর থাকে । এটি একবার ব্যবহার উপযোগী একটি জীবাণুমুক্ত এপ্লিকেটরে প্রি-লোডেড অবস্থায় থাকে ।
2.জ্যাডেল- জ্যাডেল দুই রড বিশিষ্ট ৫ বছর মেয়াদি ইমপ্ল্যান্ট । জ্যাডেল’র দুটি রডের প্রতিটিতে ৭৫ মিলিগ্রাম করে মোট ১৫০ মিলিগ্রাম লেভোনরজেস্ট্রিল থাকে । এর অন্য নাম হচ্ছে নরপ্ল্যান্ট-(II) জ্যাডেলের দুটি সিলিকন ক্যাপসুল (সাইলাস্টিক টিউব) ও ট্রকার জীবাণুমুক্ত একটি প্যাকেটে থাকে ।
#ইমপ্ল্যান্ট কিভাবে কাজ করে
ডিম্বস্ফুটন রোধ করে । ইমপ্ল্যানন পুরো ৩/৫ বছরই সম্পূর্ণরূপে ডিম্বস্ফুটন রোধ করে ।
সারভিক্সের নিঃসরণের বা শ্লেষ্মার ঘনত্ব বাড়ায় ।
এন্ডোমেট্রিয়াম এর পুরুত্ব কমিয়ে দেয় ।
ইমপ্ল্যান্ট কাদের জন্য উপযোগী
*নবদম্পতি।
*যারা দীর্ঘদিনের জন্য জন্মবিরতি চান।
*যারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান।
*যারা ইস্টোজেন সমৃদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন না।
# ইমপ্ল্যান্ট-এর সুবিধা
*খুবই কার্যকর ।
*দীর্ঘমেয়াদি ।
*খুলে ফেলার প্রায় সাথে সাথেই গর্ভধারণ ক্ষমতা ফিরে আসে।
*নবদম্পতিরাও ব্যবহার করতে পারেন ।
*যৌনইচ্ছা বা যৌনমিলনে বাধার সৃষ্টি করে না ।
*প্রসব পরবর্তী মা যারা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন তারা সন্তানের বয়স ৬ সপ্তাহ পর থেকেই এটি ব্যবহার করা যায় ।
*যারা ইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন না তাদের জন্য এটা একটি উপযুক্ত পদ্ধতি ।
#ইমপ্ল্যান্ট-এর অসুবিধা
*প্রিয়ডের স্রাবের ধরন পরিবর্তন করে।
*প্রজেস্টরেন হরমোনে সংবেদনশীল এমন মহিলা এটি *ব্যবহার করতে পারেন না ।
*কখনো কখনো বাইরে থেকে বোঝা যায় ।
*পরতে ও খুলতে হলে সেবাদান কেন্দ্রে যেতে হয় ।
#ইমপ্ল্যান্ট নেয়ার/ব্যবহারের উপযুক্ত সময়
*মাসিকের ১-৭ দিনের মধ্যে ।
*মিশ্র খাবার বড়ি গ্রহীতার ক্ষেত্রে -
*সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল শেষ খাবার বড়ি (সাদাবড়ি) খাওয়ার পরদিন ।
*এছাড়া সবগুলো বড়ি (আয়রন সহ)খাওয়া শেষ হলে তার পরদিন ।
#অন্য কোনো প্রজেস্টরেন হরমোন ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে -
*মিনিপিল বাদ দেয়ার দিন ।
*ইমপ্ল্যান্ট খোলার দিন ।
*ইনজেকটেবলস এর মেয়াদ কার্যকর থাকা অবস্থায় ।
*প্রসব পরবর্তী সময়ে--
*মা বুকের দুধ খাওয়ালে ৬ সপ্তাহ পরে।
*মা বুকের দুধ না খাওয়ালে প্রসবের সাথে সাথে।
*গর্ভপাত হলে সাথে সাথে।
গর্ভ নেই তা নিশ্চিত হলে যে কোনো সময়ে ।
#ইমপ্ল্যান্ট সেবা কোথায় পাবেন
ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনে অভিজ্ঞ ডাক্তার বা সেবাদানকারীর সাহায্য নিতে হবে। আমাদের দেশে প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্বীকৃত এনজিও/ বেসরকারি ক্লিনিকে ইমপ্ল্যান্ট সেবা পাওয়া যায় ।
#ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের পর অনুসরণ (ফলো-আপ)
নিয়মিত ফলো-আপের জন্য ইমপ্ল্যান্ট নেয়ার এক বছরের মধ্যে মোট ৩ বার ক্লিনিকে আসতে হবে-
১ম ফলো-আপঃ স্থাপনের ১ মাস পর + ৭ দিন ।
২য় ফলো-আপঃ স্থাপনের ৬ মাস পর + ১ মাস ।
৩য় ফলো-আপঃ স্থাপনের ১২ মাস পর + ১ মাস ।
এছাড়াও জরুরি অবস্থা দেখা দিলে যে কোনো সময় ক্লিনিকে আসার পরামর্শ দেয়া হয় ।
#ইমপ্ল্যান্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও করণীয়
*দুই প্রিয়ডের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হতে পারে ।
*বেশিদিন ধরে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ বা অতিরিক্ত রক্তস্রাব । এই সম্যসাটির হার খুবই কম এবং প্রথম কয়েকমাস পর এমনিতেই ভাল হয়ে যায় ।
*প্রিয়ড বন্ধ থাকতে পারে (কিছু কিছু মহিলা এটিকে সুবিধা হিসেবে গণ্য করেন)
*মাথাধরা, বমি বমি ভাব, ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে ।
*অবসাদ দেখা দিতে পারে ।
*স্তনে ব্যথা বা ভারী লাগা বোধ হতে পারে।
*তলপেটে ব্যথা হতে পারে (পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত হতেও পারে বা নাও হতে পারে)।
উল্লেখিত সম্ভাব্য জটিলতার যে কোনোএকটি দেখা দিলেই হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হবে।যদিও সমস্যা গুলো হয় না বললেই চলে.
(কপি করা)