25/10/2022
শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন,—
“মা আমার দীপান্বিতা”।
মা-কালীর মধ্যে তিনি নিজের মাকেই প্রত্যক্ষ করেছেন। একবার ছাত্রবস্থায় তিনি এক সঙ্গীর সাথে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিনীমন্দিরে যান। তখন দ্বিপ্রহরের পূজা সাঙ্গ হয়েছে। উপস্থিত সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করা হ’চ্ছে। শ্রীশ্রীঠাকুর প্রসাদ পাওয়ার আগেই মন্দিরের দরজা বন্ধ হ’য়ে গেল। তখন আর প্রসাদ দেওয়া হবে না। কিন্তু ঠাকুর তখন ক্ষুধার্ত। প্রসাদ না পেয়ে অভিমানে তিনি মন্দিরের বারান্দায় একটি গাছের ছায়ায় যেয়ে শুয়েছেন। ধীরে ধীরে ঘুমিয়েও পড়লেন। তারপর স্বপ্ন দেখছেন মা আসছেন, শ্যামা, এলোকেশী, সিঁথিতে সিঁদুর, লালপেড়ে শাড়ী পরা। তাঁর এক হাতে এক গ্লাস জল, আর এক হাতে একটা রেকাবীতে বরফি সন্দেশ। এই রূপ বর্ণনা করতে করতে শ্রীশ্রীঠাকুর বহুবার বলেছেন, “দেখতে একেবারে ঠিক আমার মায়ের মত।” মা এসে আস্তে আস্তে ব’সে শ্রীশ্রীঠাকুরের মাথাটি কোলে নিয়ে তাঁর মুখের কাছে সন্দেশ ধ’রে আদর ক’রে বলছেন, ‘খা’। ঠাকুর অভিমানভরে বলছেন, “না, আমি খাব না। তখন আমার খিদে পেয়েছিল। কিন্তু তখন আমাকে প্রসাদ দেওয়া হ’ল না কেন ? আমি আর খাব না।” তখন মা সশ্নেহ হেসে বললেন, “অত লোকের সামনে কি আমি আসতে পারি ?” এর পর মা ব’সে ব’সে পরম আদরে ঠাকুরকে ঐ সন্দেশ আর জল খাওয়ালেন। ঘুম ভেঙ্গে উঠে শ্রীশ্রীঠাকুর বোধ করছেন যে তাঁর খিদে বা পিপাসা কিচ্ছু নেই। কিছু পরে তিনি দক্ষিণেশ্বর থেকে কলকাতায় চ’লে এলেন। ভেতরটা তাঁর এমনই হ’য়ে ছিল যে কলকাতা পর্য্যন্ত হেঁটে আসার পরেও তাঁর কোন খিদে বা পিপাসার বোধ ছিল না।
এ মা কি রহস্যাবৃতা ভয়ঙ্করী শিলামূর্ত্তিমাত্র ? যার সে উপলব্ধি নেই, তার কাছে তাই। কিন্তু উপলব্ধিবান ব্যক্তিত্বের কাছে তিনি চির-শ্নেহময়ী সন্তানমঙ্গলবিধায়িনী জননী।
তাই, ইং ১৯৫৬ সালের ২রা নভেম্বর দেওয়ালির দিনে পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র অনবদ্য এক ছন্দে প্রদান করলেন এক মহাবাণী
“আজ দীপালি,
মা আমায় দীপান্বিতা,
মা আমার জীবন-আলোক,
মায়ের এক হাতে অসৎ-নিরোধী অসি,
অন্য হাতে বর ও অভয়
বাৎসল্যের পরম আশ্রয়,
তাই মা শিবানী, শুভানী,
আমার মা কল্যাণী কালী,
সত্তার সাত্বত সম্বেগ
অস্তিত্বের অমৃত-উৎস
জীবনের যোগ-নর্ত্তনা,
সেই এই যে
আমার মা।”
ইষ্টানুগ মাতৃভক্তি যার জীবনে অটুট থাকে, পূজার বেদীতে প্রতিষ্ঠিতা প্রতিমা তার কাছে স্বীয় গর্ভধারিণীরই প্রতিরূপ হ’য়ে ধরা পড়েন। মা-কালী তার কাছে আর কালোরূপা থাকেন না। তিনি হয়ে পড়েন “দীপ অন্বিতা” (দীপান্বিতা), উজ্জ্বলবরণা।
দানবনিধনার্থে তাঁর মহাভৈরবী রুদ্রমূর্ত্তি দেখে তাঁর সন্তান কখনও ভয় পায় না। সন্তান তো জানে, এ আমার মা, দুষ্টকে শাসন করছেন। তাঁর ঐ রূপ দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয় পাপীরা। অপরাধবোধ যাদের আছে, তারাই মায়ের ভয়াল মূর্ত্তিতে ভয় পায়। যেমন সিংহী যখন গর্জ্জন করে, মানুষের বা অন্যান্য পশুদের তখন ভয়ে প্রাণ শুকিয়ে যায়। কিন্তু ঐ সিংহীর বাচ্চাটি মনের আনন্দে মায়ের কাছেই খেলা করে, মা হাঁটলে মায়ের পায়ে পায়েই ঘুরতে থাকে। তার বুক কাঁপে না। কারণ, সে জানে এ তো আমার মা।
সুত্র : শ্রীশ্রীঠাকুরের দৃষ্টিতে দেবদেবী।